WBBSE Class 8 History Chapter 2 Question Answer
WBBSE Class 8 History Chapter 2 Solution | অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় (আঞ্চলিক শক্তির উত্থান) প্রশ্ন উত্তর | Class Viii ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর
১। ক-স্তম্ভের সঙ্গে খ-স্তম্ভ মিলিয়ে লেখ:
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
---|---|
অযোধ্যা | প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ |
১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দ | সাদাৎ খান |
স্বত্ববিলোপ নীতি | বক্সারের যুদ্ধ |
লাহোরের চুক্তি | মহীশূর |
টিপু সুলতান | লর্ড ডালহৌসি |
উত্তর -
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
---|---|
অযোধ্যা | সাদাৎ খান |
১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দ | বক্সারের যুদ্ধ |
স্বত্ববিলোপ নীতি | লর্ড ডালহৌসি |
লাহোরের চুক্তি | প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ |
টিপু সুলতান | মহীশূর |
ক) ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুর্শিদকুলি খান ছিলেন বাংলার -- (দেওয়ান/ ফৌজদার/ নবাব)।
উত্তর - ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুর্শিদকুলি খান ছিলেন বাংলার - দেওয়ান।
খ) আহমদ শাহ আবদালি ছিলেন ---------- (মারাঠা/ আফগান/ পারসিক)।
উত্তর - আহমদ শাহ আবদালি ছিলেন - আফগান।
গ) আলী নগরের সন্ধি হয়েছিল --------- (মীর জাফর ও ব্রিটিশ কোম্পানির মধ্যে/ সিরাজ ও ব্রিটিশ কোম্পানির মধ্যে/ মীর কাশিম ও ব্রিটিশ কোম্পানির মধ্যে)।
উত্তর - আলী নগরের সন্ধি হয়েছিল- সিরাজ ও ব্রিটিশ কোম্পানির মধ্যে ।
ঘ) ব্রিটিশ কোম্পানিকে বাংলা- বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দেন-------- (সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম/ সম্রাট ফাররুখশিয়র/ সম্রাট ঔরঙ্গজেব) ।
উত্তর - ব্রিটিশ কোম্পানিকে বাংলা- বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দেন - সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ।
ঙ) স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন ---------- (টিপু সুলতান/ সাদাৎ খান/ নিজাম) ।
উত্তর - স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন - নিজাম
৩। অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪ ০টি শব্দ):
ক) ফাররুখশিয়রের ফরমানের গুরুত্ব কি ছিল?
উত্তর - ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিযর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য যে আদেশ বা ফরমান জারি করেছিলেন, তা ভারতের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ফাররুখশিয়রের ফরমানের গুরুত্ব :
১) ফাররুখশিয়রের ফরমানের জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় অবাধে বাণিজ্য করার পথ খুলে গিয়েছিল।
২) ফাররুখশিয়রের ফরমান লাভের ফলে বাংলার নবাবদের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হয় এবং ইংরেজরা ধীরে ধীরে বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয়।
খ) কে,কিভাবে ও কবে হায়দরাবাদে আঞ্চলিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর - মীর কামার উদ দিন খান সিদ্দিকি হায়দরাবাদে আঞ্চলিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
হায়দরাবাদ ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনস্ত একটি প্রদেশ। এখানে মুঘল প্রাদেশিক শাসক মুবারিজ খান শাসন করতেন। ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে মুঘল দরবারের শক্তিশালী অভিজাত মীর কামার উদ্ দিন খান সিদ্দিকি তাকে পরাজিত করেন। ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যের সুবাদার হয়ে হায়দরাবাদে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিজাম শাসিত স্বাধীন হায়দরাবাদ রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে।
গ) "পলাশির লুণ্ঠন" কাকে বলে?
উত্তর - ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জয়লাভ করে। ইংরেজরা সিরাজ উদ্ দৌলা কে সরিয়ে মীরজাফর কে বাংলার নবাব পদে বসান।
পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি বিভিন্নভাবে নবাব মীরজাফর এর কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করে। রবার্ট ক্লাইভ সহ কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মচারীরাও ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর অর্থ নেয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রচুর অর্থ লুণ্ঠন করে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ ইংরেজরা আদায় করে। পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফরের কাছ থেকে ইংরেজদের অর্থ আত্মসাৎ কে পলাশীর লুণ্ঠন বলা হয়।
ঘ) দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
উত্তর - মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের ফলে, বাংলায় এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক শাসনতন্ত্র কায়েম হয়। বাস্তবে বাংলায় দুজন শাসক তৈরি হয়। একদিকে রাজনৈতিক ও নিজামতের দায়িত্ব ছিল বাংলার নবাবের হাতে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার পেয়েছিল ব্রিটিশ কোম্পানি। ফলে নবাবের হাতে ছিল অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব। আর ব্রিটিশ কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা। বাংলায় এই শাসনব্যবস্থাকে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বলা হয়।
ঙ) ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের কাজ কি ছিল?
উত্তর - ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের কাজ ছিল-
১) কোম্পানির পরোক্ষ শাসন অধীন রাজ্যের রাজা কোম্পানির নজর এড়িয়ে যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে তার জন্য নজরদারি করা ।
২) লর্ড ওয়েলেসলির আমল থেকে রেসিডেন্টরা আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। তারা কোম্পানিকে সরাসরি এলাকা দখলের জন্য উস্কানি দিত।
৪। নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১ ৬০টি শব্দ):
ক) অষ্টাদশ শতকে ভারতে প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থানের পিছনে মুঘল সম্রাটদের ব্যক্তিগত অযোগ্যতাই কেবল দায়ী ছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর - অষ্টাদশ শতকে ভারতে অনেকগুলি আঞ্চলিক শক্তির উত্থান হয়েছিল তবে এই আঞ্চলিক শক্তি গুলির মধ্যে তিনটি শক্তি ছিল প্রধান এগুলি হল বাংলা, হায়দরাবাদ ও অযোধ্যা।
মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকার পর কিভাবে এই বাংলা, হায়দরাবাদ ও অযোধ্যার উত্থান হয়েছিল সে সম্পর্কে অনেক মতামত আছে। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর খুব দ্রুত মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি কমতে থাকে। ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী মুঘল সম্রাটদের পক্ষে সাম্রাজ্যের ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ মুঘল সম্রাটদের ব্যর্থতার জন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ঘটেছিল।
আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থানের কারণ:
১) সামরিক দুর্বলতা - মুঘল সম্রাটদের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অভাব মুঘল সম্রাটদের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ।
২) জায়গিরদারি সংকট - মুঘল আমলে মনসবদারদের জায়গির দেওয়া হত। উন্নত জায়গির পাওয়ার আশায় অভিজাত ও মনসবদারদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়। তাছাড়া মুঘল সম্রাট হিসাব মতো রাজস্ব পেতেন না। ফলে মুঘল শক্তি দুর্বল হয় ও আঞ্চলিক শক্তির উত্থান ঘটে।
৩) কৃষক বিদ্রোহ - মুঘল যুগের জমিদার ও কৃষকদের বিদ্রোহ মুঘল সাম্রাজ্যের অবনতির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এই কৃষক বিদ্রোহের পেছনে কতগুলি কারণ ছিল যেহেতু জায়গিরের রাজস্ব থেকেই মনসবদাররা সামরিক বাহিনী হরণ পোষণ করত, তাই তারা চড়াহারে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদাই করত। ফলে কৃষকদের অসন্তোষ বিদ্রোহের রূপ নেয়।
৪) বৈদেশিক আক্রমণ - নাদির শাহ ও আহমেদ সহ আবদাল্লির আক্রমণ মুঘল শক্তিকে আরো দুর্বল করেছিল।
৫) আঞ্চলিক শাসকদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা - বাংলা, হায়দরাবাদ ও অযোধ্যা সহ বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক শাসকদের স্বাধীনতা লাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। তাই এইসব অঞ্চলের শাসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল সম্রাটের প্রতি আনুগত্য দেখালেও বাস্তবে স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করতেন।
খ) পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর - সামগ্রিক ফলাফল ও গুরুত্বের বিচারে পলাশী যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধ ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম।
বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন বাংলার নবাব মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজা উদ দৌলা এবং ভারতের মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। ফলে ভারতের রাজনীতিতে কোম্পানির ক্ষমতা ও মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানী লাভ। বক্সারের যুদ্ধের সুবিধা লাভ করার জন্য বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধিতে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা সম্রাটকে দেওয়ার বিনিময়ে কোম্পানি সুবা বাংলার দেওয়ানী লাভ করে। বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার নবাবের উপর কোম্পানির পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলার নবাব নামমাত্র শাসক এ পরিণত হয়েছিলেন বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে ভারতে ইংরেজ বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল ফলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এইসব দিক থেকে বিচার করলে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে পলাশীর যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধ ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গ) মীর কাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের ক্ষেত্রে কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসার কি ভূমিকা ছিল? বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রভাব কি হয়েছিল?
উত্তর - ব্রিটিশ কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সঙ্গে বাংলার নবাব মীর কাশেমের বিবাদ শুরু হয়। 1717 খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়ারের কাছ থেকে ব্রিটিশ কোম্পানি যে ফরমান লাভ করেছিল তাতে শুধুমাত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিনাশুলকে বানিজ্য করার অধিকার লাভ করে। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসাতে এই ফরমান ব্যবহার করতে শুরু করে। এর ফলে কোম্পানির বণিকদের বেআইনি ব্যবসার ফলে বাংলার অর্থনীতির সমস্যার মুখে পড়ে। কোম্পানির বণিকরা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় নবাবের রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয়। দেশীয় বণিকরা শুল্ক দিতে বাধ্য হওয়ায় তারা ব্যবসাতে অসমাপ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রভাব- দ্বৈত শাসনের ফলে বাংলায় কোম্পানি চরমভাবে অর্থ শোষণ করেছিল। দ্বৈত শাসন বাংলাদেশে অরাজকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রশাসনের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ প্রচার নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি করে। সেই সুযোগে কোম্পানির ইংরেজ কর্মচারীরাও প্রজাদের উপর শোষণ শুরু করে। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রভাবে বাংলায় ৭৬ এর মন্বন্তর দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার এক তৃতীয়াংশ লোক অনাহারে মারা যায়।
ঘ) ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অধীনতামূলক মিত্রতানীতি থেকে স্বত্ববিলোপ নীতিতে বিবর্তনকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে ?
উত্তর - ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা lনীতি ও লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি থেকে শর্তবিলোপ নীতিতে বিবর্তন:-
১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ভারতে এসে সত্যগুলোকে নীতি প্রয়োগ করেন। স্বত্ববিলোপ নীতি গ্রহণে লর্ড ডাউনহসির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-
১. যত বেশি সংখ্যার সম্ভব ভারতীয় রাজ্যগুলিকে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীনে আনা।
২. ডালহৌসি একথা ভেবেছিলেন , যে দেশীয় রাজ্যগুলি কোম্পানির মিত্র তারা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। কিন্তু এখন তাদের আর প্রয়োজন নেই।
লর্ড ডালহৌসের স্বত্ববিলোপ নীতি ছিল লর্ড ওয়েলেসলির অনুসরণ করা অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির স্বাভাবিক পরিণতি। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করে দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের ক্ষীণ অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল। রাজ্যগুলিকে সত্য বিলোপ নীতি বা অন্য অজুহাতে দখল করেছিলেন অথবা তাদের স্বত্ব বিলোপ করেছিলেন
ঙ) মুর্শিদকুলি খান ও আলিবর্দি খানের সময় বাংলার সঙ্গে মুঘল শাসনের সম্পর্কের চরিত্র কেমন ছিল?
উত্তর - মুর্শিদকুলি খানের সময় থেকে মুঘল শাসন ও অধীন সুবা বাংলা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ধীরে ধীরে সুবা বাংলার উপর মুঘল সম্রাটদের কর্তৃত্ব কমতে থাকে। নবাব আলীবর্দির শাসন কালে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখল কর্তৃত্ব কে স্বীকার করা হলেও বাংলায় তিনি স্ব-শাসিত প্রশাসন চালাতেন।
মুর্শিদকুলি খানের সময় বাংলার সঙ্গে মুঘল শাসনের সম্পর্ক :
মুর্শিদকুলি খানের আগের নাম ছিল মোহাম্মদ হাদি। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তার সততা ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে মুর্শিদকুলি খান উপাধি দেন। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাকে বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কারের জন্য বাংলার দেওয়ার নিযুক্ত করেন। বাহাদুর শাহের আমলেও তিনি দেওয়ান পদে বহাল ছিলেন। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র তাকে দেওয়ান পদের সঙ্গে নাজিম বা নবাব পদ দেন। এই সময় থেকে মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বে বাংলা স্বাধীন ইতিহাসের সূচনা হয়।
আলিবর্দি খানের সময়ে বাংলার সঙ্গে মোগল শাসনের সম্পর্ক :
আলিবর্দি খানের শাসনকালে বাংলা সুবার অধিকার মুঘলদের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। তিনি বাংলার শাসনতন্ত্রের কোন খবর মুঘল সম্রাট কে জানাতেন না। আলীবর্দী মুঘল সম্রাটকে রাজস্ব পাঠাতেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল কর্তৃত্ব কে স্বীকার করলেও বাস্তবে বাংলায় তিনি স্বশাসিত প্রশাসন চালাতে।
অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১) অন্ধকূপ হত্যা বলতে কি বোঝায়?
উত্তর - ইংলিশ কর্মচারী হলওয়েলের বিবরণ থেকে জানা যায়, নবাবের ফোর্ট উইলিয়াম দখলের পর নবাব বাহিনীর হাতে কোম্পানির ১৪৬ জন কর্মচারী বন্দী হয়েছিল। ওই রাত্রে 18 ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট চওড়া একটি কক্ষে বন্দিদের রাখা হয়েছিল। পরদিন সকালে তাদের মধ্যে ১২৩ জন মারা যায়। এই ঘটনা অন্ধ খুব হত্যা নামে পরিচিত।
২) ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলতে কী বোঝায়? এই মন্বন্তরের ফলাফল কি হয়েছিল?
উত্তর - ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের যে মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল তা ইতিহাসের ছিয়াত্তরের মনান্তর নামে পরিচিত।
ফলাফল
দুর্ভিক্ষের সময় খাবারের অভাবে মানুষ অখাদ্যক খাদ্য খাওয়ার ফলে বাংলায় এক মহামারীর দেখা দেয় এবং বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ তাতে মারা যায় । এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য কৃষক, তাঁতি, শিল্পী,কারিগর, কুম্ভকার ইত্যাদি শ্রমজীবীর মৃত্যু হওয়ায় বাংলার কৃষি ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩) টীকা লেখো:-
(ক) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি - বাংলার গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন।
শর্তাবলি:- এই নীতির শর্তগুলি হল-
১. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণকারী রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিপদ ও বৈদেশিক আক্রমণ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রক্ষা করবে।
২. ইংরেজ সেনাবাহিনীর ব্যবহার মিত্রতা নীতি গ্রহণকারী রাজ্যকেই বহন করতে হবে ।
৩. ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে সেনাবাহিনীর ব্যয়ের জন্য জমির পরিবর্তে কোম্পানিকে নগদ অর্থ দিতে হবে ।
৪. মিত্রতার আবদ্ধ ও রাজ্যগুলি কোম্পানির অনুমতি ছাড়া কোন ইউরোপীয়কে তারা রাজ্যে বাণিজ্যের অনুমতি দিতে পারবে না।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি সর্বপ্রথম গ্রহণ করেছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম। এছাড়াও অযোধ্যা, কর্ণাটক, তাঞ্জোর, সুরাট ইত্যাদি রাজ্য ব্রিটিশদের অধিকারভুক্ত হয়।
(খ) স্বত্ববিলোপ নীতি :- ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লড ডালহৌসি ভারতে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন। এই নীতি উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি সংখ্যক ভারতীয় রাজ্যগুলিকে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীনে আনা যায়।
এই নীতির শর্ত গুলি হল-
১. এই নীতি গ্রহণকারী দেশীয় কোনো রাজ্যের রাজার পুত্র সন্তান না থাকলে সেই রাজা কোন দত্তপুত্র গ্রহণ করতে পারবে না এবং রাজ্যটি তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত হবে।
২. এছাড়াও দত্তক নিতে চাইলে কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে ইংরেজ আশ্রিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ।
৩. একমাত্র দেশীয় স্বাধীন রাজ্যগুলির ব্যাপারে কোম্পানি নিরপেক্ষ থাকবে।
ডালহৌসি এই নীতি প্রয়োগ করে কোলবা, সাতারা, ভগৎ, সম্বলপুর, নাগপুর ইত্যাদি রাজ্য গুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত করেন
এক কথায় উত্তর দাও
1.কত খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মারা যান ?
উত্তর - ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে।
2. কোন যুদ্ধে জয়লাভ করে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্থান ঘটেছিল ?
উত্তর - পলাশীর যুদ্ধে।
3. ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু এবং পলাশির যুদ্ধের মধ্যে কত বছরের ব্যবধান ছিল ?
উত্তর - ৫০ বছরের ।
4.কোন মুঘল সম্রাটের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে থাকে?
উওর - ঔরঙ্গজেব।
5. কোন গ্রন্থে বাংলায় বর্গী হানার কথা জানা যায়?
উত্তর - গঙ্গারামের লেখা মহারাষ্ট্র পুরান থেকে ।
6. কবে নিজাম শাসনাধীন স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যে আত্মপ্রকাশ করে?
উত্তর - ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে।
7. বক্সি কথার অর্থ কি?
উত্তর - সেনাপতি।
8. কত খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ হয়?
উত্তর - ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে।
9.সুবা বাংলার রাজস্ব আদায়ের জন্য ঔরঙ্গজেব কাকে ‘দেওয়ান’ নির্বাচন করেন ?
উত্তর - মুর্শিদকুলি খান কে।
10.মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ-এর আমলে সুবা বাংলার ‘দেওয়ান’ কে ছিলেন?
উত্তর - মুর্শিদকুলি খান।
11. 'সুবা কী ?
উত্তর - মুঘল আমলের এক একটি প্রদেশ।
12. কোন্ নগরকে ‘জাহাঙ্গির নগর’ বলা হত ?
উত্তর - ঢাকা কে।
13. কবে এলাহাবাদের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ?
উত্তর - ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ।
14.'মুর্শিদকুলি খাঁর অভ্যুদয়' প্রবন্ধ কার রচনা ?
উত্তর - যদুনাথ সরকারের।
15.কার নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তিরূপে বাংলার উত্থান ঘটে ?
উত্তর - মুর্শিদকুলি খান।
16.উমিচাঁদ কে ছিলেন?
উত্তর - হিন্দু ব্যবসায়ী।
17. খোজা ওয়াজিদ কে ছিলেন?
উত্তর - আর্মেনীয় বসায়ী।
18. মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত মূলধন বিনিয়োগকারীর নাম কী ?
উত্তর - জগত শেঠ।
19.সুবা বাংলার কোশাগার ও টাকশাল কার পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলত ?
উত্তর - জগত শেঠ।
20. মুর্শিদাবাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যেসব বণিকদের প্রভাব ছিল, তারা কী নামে পরিচিত?
উত্তর- বণিকরাজা।
21. বাংলায় দ্বৈত শাসন কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর - লর্ড ক্লাইফ।
22. কে মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ‘জগৎ শেঠ' বা ‘জগতের শেঠ' উপাধি পান?
উত্তর - ফতেহচাঁদ।
23. দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান কে করেন?
উত্তর -ওয়ান ইন হেস্টিংস।
24.কোন্ নবাবের আমলে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায় ?
উত্তর - আলীবর্দী খান।
25. কত খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ভয়াবহ মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল?
উত্তর - ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে।
26.আলিবর্দি খানের দৌহিত্র কে ছিলেন?
উত্তর - সিরাজ উদ দৌলা
27.আলিবর্দি খানের পর বাংলার সিংহাসনে কে বসেন?
উত্তর - সিরাজ উদ দৌলা
28.বর্গিরা কার আমলে বাংলা আক্রমণ করেছিল ?
উত্তর - আলিবর্দি খানের।
29. কোন দেশীয় রাজ্য সর্বপ্রথম অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেছিল?
উত্তর - হায়দ্রাবাদ।
30. কোন দেশীয় রাজ্যে স্বত্ববিলোপ নীতি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল?
উত্তর - সাতারা
31. কে মহিশূর শার্দুল নামে পরিচিত ছিলেন?
উত্তর - টিপু সুলতান।
32. মহীশূরের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর - শ্রীরঙ্গপত্তম।
33. শেষ মারাটা পেশোয়া কে ছিলেন?
উত্তর - দ্বিতীয় বাজিরাও।
34. কত খ্রিস্টাব্দে বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর - ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে.
35. বাংলার প্রথম গভর্নর ছিলেন কে?
উত্তর - রবার্ট ক্লাইভ
36. পলাশীর যুদ্ধ কবে হয়েছিল?
উত্তর - ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
37. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়েছিল কবে?
উত্তর - ১৭৭৬ বঙ্গাব্দে।
38. লর্ড ডালহৌসি কুশশাসনের অজুহাতে কোন রাজ্যটি গ্রাস করেন?
উত্তর - অযোধ্যা
39. কত খ্রিস্টাব্দে সলবাইয়ের সন্ধি হয়?
উত্তর - ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে।
40. কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গো শিখ যুদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর - ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
শেষ কথা ঃ-
এই পোস্টে আষ্টম শ্রেনির ইতিহাস দ্বিতীয় আধ্যায় আঞ্চলিক শক্তির উত্থান থেকে আনুশীলনী ও অন্যান্য প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হলো। পরবর্তী সময়ে আরও পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আপডেট দেওয়া হবে।
Edu হোস্টারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url