সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় (মুঘল সম্রাজ্য) প্রশ্ন উত্তর
Class 7 ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | Class 7 history chapter 5 WBBSE question answer
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
১) গাজি শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর - গাজি শব্দের অর্থ ধর্মযোদ্ধা।
২) নসরৎ শাহ কোথাকার শাসক ছিলেন ?
উত্তর - নসরৎ শাহ বাংলার শাসক ছিলেন।
৩) হিমু কে ছিলেন ?
উত্তর - হিমু ছিলেন আদিল শাহের সেনাপতি।
৪) খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে ছিল ?
উত্তর - খানুয়ার যুদ্ধে বাবর এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহ।
৫) হুমায়ূন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে কোথায় আশ্রয় নেন ?
উত্তর - হুমায়ুন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে পারস্যের সম্রাট শাহ তাহমস্পের কাছে আশ্রয় নেন।
৬) আকবর কত বছর বয়সে শাসনভার গ্রহণ করে ?
উত্তর - আকবর 13 বছর বয়সে শাসনভার গ্রহণ করে।
৭) দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে সংঘটিত হয় ?
উত্তর - দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিমুর সাথে মুঘল সম্রাট আকবরের সংঘটিত হয়।
৮) কোন যুদ্ধে রানা প্রতাপ সিংহ পরাজিত হয় ?
উত্তর - হলদিঘাটের যুদ্ধে।
৯) ওয়াতন শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর - ওয়াতন শব্দের অর্থ নিজের ভীটে বা এলাকা, স্বদেশ।
১০) কে তীর্থকর ও জিজিয়াকর তুলে নেন ?
উত্তর - সম্রাট আকবর তীর্থকর ও জিজিয়াকর তুলে নেন।
১২) খান্দেশের দুর্গ টির নাম কি ?
উত্তর - অসিরগড় দুর্গ।
১৩) কে দশশালা ব্যবস্থা চালু করেন ?
উত্তর - আকবর দশশালা ব্যবস্থা চালু করে।
১৪) আকবরের রাজস্ব মন্ত্রীর নাম কি ছিল ?
উত্তর - টোডরমল ।
১৫) চেঙ্গিস খান কে ছিলেন ?
উত্তর - চেঙ্গিস খান মোঙ্গল নেতা ছিলেন।
১৬) পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল ?
উত্তর - পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।
১৭) ঘর্ঘরার যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল ?
উত্তর - ঘর্ঘরার যুদ্ধ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।
১৮) হলদিঘাটের যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল ?
উত্তর - হলদিঘাটের যুদ্ধ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।
১৯) আকবরের সম্রাজ্যের প্রদেশগুলোকে কি বলা হত ?
উত্তর - সুবা বলা হত।
২০) উচ্চপদস্থ মনসবদারদের কি বলা হত ?
উত্তর - আমির বলা হত।
২১) ভারতবর্ষের প্রথম মুঘল বাদশা কে ছিলেন ?
উত্তর - জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ভারতবর্ষের প্রথম মুঘল বাদশা ছিলেন।
২২) সফাবি কি ?
উত্তর - সফাবি ছিল ইরানের একটি রাজবংশ।
২৩) উজবেক কারা ?
উত্তর - উজবেকরা ছিল মধ্য এশিয়ার একটি তুর্কিভাষী জাতি।
২৪) আবুল ফজল আল্লামি কে ছিলেন ?
উত্তর - একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন।
২৫) জাবত কথার অর্থ কি ?
উত্তর - নির্ধারণ।
২৬) দহ কথার অর্থ কি ?
উত্তর - দহ কথার অর্থ দশ।
ভেবে দেখো খুঁজে দেখো
১। শূন্যস্থান পূরণ করো :
(ক) ঘর্ঘরার যুদ্ধে বাবরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন _________ (রানা সঙ্গ /ইব্রাহিম লোদি /নসরৎ খান)।
উত্তর - ঘর্ঘরার যুদ্ধে বাবরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নসরৎ খান।
(খ) বিলগ্রামের যুদ্ধ হয়েছিল __________ (১৫৩৯/ ১৫৪০/১৫৪১) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর - বিলগ্রামের যুদ্ধ হয়েছিল ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে।
(গ) জাহাঙ্গিরের আমলে শিখ গুরু _______ (জয়সিংহ/অর্জুন/হিমু) কে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।
উত্তর - জাহাঙ্গিরের আমলে শিখ গুরু অর্জুন কে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।
(ঘ) রাজপুত নেতাদের মধ্যে মুঘল সম্রাটদের সঙ্গে জোট বাঁধেননি রানা ________ ( প্রতাপ সিংহ/মানসিংহ/ যশোবন্ত সিংহ )।
উত্তর - রাজপুত নেতাদের মধ্যে মুঘল সম্রাটদের সঙ্গে জোট বাঁধেননি রানা প্রতাপ সিংহ।
(ঙ) আহমেদনগরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ______ (টোডরমল/মালিক অম্বর/বৈরাম খান)।
উত্তর - আহমেদনগরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মালিক অম্বর।
২। নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে তার নিচের কোন ব্যাখ্যাটি তোমার সবচেয়ে মানানসই বলে মনে হয় ?
(ক) বিবৃতি : মুঘলরা তৈমুরের বংশধর হিসেবে গর্ব করত।
ব্যাখ্যা - ১ : তৈমুর ভারতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ব্যাখ্যা - ২ : তৈমুর এক সময় উত্তর ভারত আক্রমণ করে দিল্লির দখল করেছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩ : তৈমুর ছিলেন একজন সফাবি শাসক।
উত্তর - ব্যাখ্যা - ২ : তৈমুর এক সময় উত্তর ভারত আক্রমণ করে দিল্লির দখল করেছিলেন।
(খ) বিবৃতি : হুমায়ুনকে একসময় ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল।
ব্যাখ্যা - ১ : তিনি নিজের ভাইদের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল।
ব্যাখ্যা - ২ : তিনি শের খানের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩ : তিনি রানা সঙ্গের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন।
উত্তর - ব্যাখ্যা - ২ : তিনি শের খানের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন।
(গ) বিবৃতি : মহেশ দাসের নাম হয়েছিল বীরবল।
ব্যাখ্যা - ১ : তাঁর গায়ে খুব জোর ছিল।
ব্যাখ্যা - ২ : তিনি খুব বুদ্ধিমান ছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩ : তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন।
উত্তর - ব্যাখ্যা - ২ : তিনি খুব বুদ্ধিমান ছিলেন।
(ঘ) বিবৃতি : ঔরঙ্গজেবের আমলে বাংলায় সামুদ্রিক বাণিজ্যের উন্নতি হয়।
ব্যাখ্যা - ১ : তিনি পর্তুগিজ জলদস্যুতের হারিয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা - ২ : তিনি শিবাজিকে পরাজিত করেছিলেন।
ব্যাখ্যা - ৩ : তিনি বাংলায় বাণিজ্যের উপর কর ছাড় দিয়েছিলেন।
উত্তর - ব্যাখ্যা - ১ : তিনি পর্তুগিজ জলদস্যুতের হারিয়েছিলেন।
(ঙ) বিবৃতি : আকবরের আমলে জমি জরিপের পদ্ধতিকে বলা হত জাবতি।
ব্যাখ্যা - ১ : জাবত মানে বাজারে শস্যের দাম ঠিক করা।
ব্যাখ্যা - ২ : জাবত মানে একমাত্র বাদশাহ কর আদায় করতে পারেন।
ব্যাখ্যা - ৩ : জাবত মানে জমির রাজস্ব নির্ধারণ করা।
উত্তর - ব্যাখ্যা - ৩ : জাবত মানে জমির রাজস্ব নির্ধারণ করা।
৩। সংক্ষেপে (৩০-৫০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) মুঘলরা কেন নিজেদের বাদশাহ বলতো ?
উত্তর - বাদশাহ বা পাদশাহ একটি ফারসি শব্দ। যা পাদ অর্থাৎ প্রভু এবং শাহ অর্থাৎ শাসক বা রাজা, এই দুটি শব্দ থেকে এসেছে। খুব শক্তিশালী সার্বভৌম শাসক বোঝাতে মুঘলরা নিজেদের বাদশাহ বলতো।
(খ) হুমায়ুন আফগানদের কাছে কেন হেরেগিয়েছিলেন?
উত্তর- হুমায়ুন পরপর দুবার আফগান নেতা শের খানের কাছে পরাজিত হয়েছিল। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসার যুদ্ধে এবং ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কোনৌজের কাছে বিলগ্রামের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হুমায়ুনকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল।
হুমায়ূনের আহগানদের বিরুদ্ধে পরাজয়ের বেশ কয়েকটি কারণ ছিল -
১) আফগানদের নেতৃত্বকারী শের শাহের সামরিক প্রতিভা, রাজনৈতিক দক্ষতা ও রণকৌশল সব কিছুর কাছেই হুমায়ুনের দক্ষতা ছিল খুবই নগণ্য।
২) মুঘলরা দিল্লির সিংহাসন দখল করে নিলেও, তা পুনরুদ্ধার করার অদম্য ইচ্ছা আফগানদের মধ্যে তখনও প্রবল ছিল।
৩) হুমায়ুনের সেনাবাহিনী এতই ক্ষুদ্র ছিল যে তা দিয়ে তার সম্রাজ্য রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। এছাড়াও নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আর্থিক দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে আফগানদের বিরুদ্ধে পরাজিত হন।
(গ) ঔরঙ্গজেবের রাজত্বে কেন মুঘল অভিজাতদের মধ্যে রেষারেষি বেড়েছিল ?
উত্তর - ওরঙ্গজেবের শাসনকালে দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকোন্ডা মুঘলদের দখলে আসে। ফলে মারাঠা ও দক্ষিণী মুসলিম অভিজাতরা মুঘল শাসনে যোগ দেয়। এর ফলে মনসবদারি ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনার জন্যে নতুন করে মনসব প্রদান শুরু করেন। এই মনসব পাওয়া নিয়ে অভিজাতদের মধ্যে রেষারেষি তৈরি হয়েছিল।
(ঘ) সুলহ - ই কুল কী ?
উত্তর - সুলহ - ই কুল কথার অর্থ হলো সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মসহিষ্ণুতা। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত থাকবেনা। সকলের প্রতি সহনশীলতা এবং সকলের জন্য শান্তির এই পথকেই বলা হয় সুলহ - ই কুল। এই আদর্শের ভিত্তিতে আকবর একটি ব্যক্তিগত মতামত গড়ে তুলেছিলেন যাকে বলা হয় " দীন-ই এলাহি"।
(ঙ) মুঘল শাসনব্যবস্থায় সুবা প্রশাসনের পরিচয় দাও ?
উত্তর - মুঘল সম্রাট বাবরের শাসনকাল যুদ্ধবিগ্রহ এই কেটেছিল। পরবর্তীকালে আকবর তার সম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করেছিলেন। তোদের স্কুলিকে বলা হতো সুবা। সুবা গুলি আবার ভাগ করা হতো কয়েকটি সরকারে এবং সরকার গুলি ভাগ করা হতো পরগনাতে।
৪। বিশদে (১০০-১২০ টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :
(ক) পানিপতের প্রথম যুদ্ধ খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরার যুদ্ধের মধ্যে তুলনা করো। পানিপতের প্রথম যুদ্ধে যদি মুঘলরা জয়ী না হতো তাহলে উত্তর ভারতে কারা শাসন করতো ?
উত্তর - পানিপতের প্রথম যুদ্ধ খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরার যুদ্ধের মধ্যে তুলনা -
পানিপতের প্রথম যুদ্ধ | খানুয়ার যুদ্ধ | ঘর্ঘরার যুদ্ধ |
---|---|---|
1.পানিপতের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়। | 2.খানুয়ার যুদ্ধ ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়। | 3.ঘর্ঘরার যুদ্ধ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়। |
1.এই যুদ্ধ বাবর ও ইব্রাহিম লোদির মধ্যে সংঘটিত হয়। | 2.এই যুদ্ধ বাবর ও রানা সংগ্রাম সিংহের মধ্যে সংঘটিত হয়। | 3.এই যুদ্ধ বাবর ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী মামুদ লোদি, শের খান এবং সুলতান নুসরৎ শাহের মধ্যে সংঘটিত হয়। |
1.এই যুদ্ধ ছিল আফগান শক্তির বিরুদ্ধে। | 2.এই যুদ্ধ ছিল রাজপুত শক্তির বিরুদ্ধে। | 3.এই যুদ্ধ ছিল মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে। |
1. এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভে ভারতে লোদি বংশের ক্ষমতা চিরতরে অবলুপ্ত হয়। | 2. এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভে ভারতে রাজপুত আধিপত্যের আশা চিরতরে অবলুপ্ত হয়। | 3. এই যুদ্ধে বাবরের জয়লাভ তারে প্রতিপক্ষ শক্তি আফগান শক্তি জোট সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। |
পানিপতের প্রথম যুদ্ধে যদি মোঘলরা জয়ী না হতো তাহলে উত্তর ভারতে আফগানরা শাসন করতো।
(খ) শেরশাহর শাসন ব্যবস্থায় কী কী মানবিক চিন্তার পরিচয় তুমি পাও তা লেখো ।
উত্তর - শেরশাহ তার শাসনব্যবস্থায় শাসন পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জনহিতকর সংস্কার করেছিলেন -
১) শেরশাহ কৃষককে পাট্টা দিতেন। এই পাট্টায় কৃষকের নাম, জমিতে কৃষকের অধিকার, কত রাজস্ব দিতে হবে লেখা থাকতো।
২) শের শাহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে সড়ক পথের উন্নতি করেন। তিনি বাংলার সোনারগা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সড়ক সংস্কার করেন। এই রাস্তায় পরবর্তীকালে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে খ্যাত হয়।
৩) পথিক ও বণিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে ধারে অনেক সরাইখানা তৈরি করেন।
৪) শেরশাহ ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছিলেন।
মাত্র পাঁচ বছরের রাজত্বকালের মধ্যে শেরশাহ শাসনব্যবস্থার যে সংস্কার করেছিলেন তা তাকে ভারতের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
(গ) মুঘল শাসকদের রাজপুত নীতিতে কি কি মিল ও অমিল ছিল তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর - মুঘল বাদশাহ হুমায়ুন বুঝেছিলেন যে, হিন্দুস্থানের ক্ষমতা দখল করতে গেলে রাজপুত রাজাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা দরকার। কারণ, রাজপুত্রাই ছিল উত্তর ভারতের বিশাল অঞ্চলের জমিদার। পরে এই ধারণা থেকেই বাদশাহ আকবর মৈত্রী ও যুদ্ধনীতির সাহায্যে রাজপুত্রের মন্তসবদারী ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসেন। যা জাহাঙ্গীর শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেবের আমলে অক্ষুণ্ন ছিল। মুঘল বাদশাহ ও শাহজাদাদের সঙ্গে কোন রাজপুত পরিবারের মেয়েদের বিয়ে হওয়ার ফলে মুঘল রাজপুত মৈত্রীর পথ আরো প্রশস্ত হয়েছিল। মুঘল সম্রাটদের আমলে রাজ দরবারে এবং সামরিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজপুত শাসকরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অধিকারী ছিল। তবে কোনো রাজপুত্র রাজ্যে উত্তরাধিকার নিয়ে গোলমাল শুরু হলে মুঘলরা সেই রাজ্য সাময়িকভাবে পুরোপুরি হাতে নিয়ে নিতো।
তবে রাজপুতনীতির ক্ষেত্রে মুঘল শাসকদের মধ্যে বেশ কিছু অমিল লক্ষ্য করা যায়। যেমন - শাহাজাহান প্রথম দিকে রাজপুরদের থেকে মৌলবাদী শক্তিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। আকবরের আমলে হিন্দুদের উপর থেকে তীর্থ কর ও জিজিয়া কর তুলে নেওয়া হলেও ঔরঙ্গজেবের আমলে জেজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ফলে রাজপুত মৈত্রীতে প্রচন্ড আঘাত পড়ে। সম্রাট আকবর থেকে শাহাজাহান পর্যন্ত মুঘল শাসকরা রাজপুতদের সাথে আপোস নীতির মাধ্যমে মুঘল সম্রাজ্য কে দৃঢ়তা প্রদানে সক্ষম হলেও ঔরঙ্গজেব রাজপুত্রের সাথে নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। যা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অনেকখানি দায়ী।
(ঘ) দাক্ষিণাত্য অভিযানের ক্ষত মুঘল শাসনের উপর কি প্রভাব ফেলেছিল ?
উত্তর - ওরঙ্গজেবের সময়ে মারাঠাদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ওরঙ্গজেব ভেবেছিলেন যে দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করতে পারলে সেখান থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করা যাবে। তার সঙ্গে মারাঠাদের দমন করাও সহজ হবে। ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘলরা বিজাপুর ও গোলকোন্ডা দখল করেছিল। কিন্তু বাদশাহ যা ভেবেছিলেন হয়নি। তার বদলে বহু বছরের রক্তক্ষয় যুদ্ধে মুঘলদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়। দাখিন আত্ম যুদ্ধের এই ক্ষত আর সারেনি। মারাঠা নেতা শিবাজী কে স্বাধীন রাজা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়। ২৫ বছর ধরে যুদ্ধ করে ওরঙ্গজেব শেষে দাক্ষিণাত্যেই মারা যান। ফলে মুঘল সাম্রাজ্য অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে।
(ঙ) মুঘল সম্রাটদের কি কোন নির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতি ছিল ? উত্তরাধিকারের বিষয়টি কেমন ভাবে তাদের শাসনকে প্রভাবিত করেছিল ?
উত্তর - মুসলিম আইন অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ পুত্রকে সিংহাসনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কিন্তু মুঘল সিংহাসনের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। তাই প্রত্যেক সম্রাটের মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সিংহাসনের অধিকার নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ বেঁধে যেতো। এই কারণেই দেখা যায় যে, সম্রাট শাহাজাহান তার প্রিয় পুত্র সুজাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করে গেলেও তার মৃত্যুর পর অন্যান্য পুত্র দারা, মুরাদ ও ঔরঙ্গজেব সিংহাসনের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যা মুঘল শাসনের কলঙ্কের ছাপ ফেলেছিল।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
১) পাট্টা ও কবুলিয়ত কি ?
উত্তর - শের শাহর বিভিন্ন সংস্কারগুলির মধ্যে রাজস্ব সংস্কারের ক্ষেত্রে পাট্টা ও কবুলিয়াত ছিল ভূমি রাজস্ব বিষয়ক দুটি দলিল। প্রত্যেক পূজার জমির সীমানা, খাজনা ও জমির উপর তার অধিকার উল্লেখ করে প্রজাকে যে দলিল দেওয়া হতো তা পাট্টা নামে পরিচিত। তার বদলে নিজের সত্য ও রাজস্ব দেওয়ার শর্ত স্বীকার বা কবুল করে সম্রাট কে যে দলিল প্রজারা স্বাক্ষর করে দিত তার নাম কবুলিয়ত।
২) মনসবদারি ও জায়গিরদারি ব্যাবস্থা বলতে কি বোঝো ?
উত্তর - মনসবদারদের দুভাবে বেতন দেওয়া হতো। নগদে অথবা রাজস্ব বরাত দিয়ে। রাজস্বের এই বরাতকে বলা হতো জায়গির। জায়গির যিনি পেতেন তিনি জয়গিদার। এই ব্যবস্থা কে বলা হতো জায়গিরদারি ব্যবস্থা। যে রাজস্ব আদাই করা হতো তার এক অংশ দিয়ে জায়গিদাররা নিজেদের ভরণ পোষণ করত এবং ঘোরসাওয়ারদের দেখাশোনা করত। জায়গীর মানে কিন্তু জমি নয়। চাষ জমি, বন্ধর এলাকা, বাজার এসবের থেকেই রাজস্ব আদায়ের বরাত জায়গীর হিসেবে দেওয়া হত।
মনসবদারদের বাদশা নিজেই নিয়োগ করতেন তাদের পদোন্নতি ও তার উপরে নির্ভর করত। জায়গিরদারদের বদলি করা হতো। মনসবদারী ও জায়গীদেরই ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল না।
৩) হলদিঘাটের যুদ্ধ সম্পর্কে লেখ ?
উত্তর - ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মেবারের রানা প্রতাপ সিংহের সাথে আকবরের হলদিঘাটের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে আকবর রাজা মানসিংহ কে পাঁচ হাজার সৈন্য সমেত রানা প্রতাপ এর বিরুদ্ধে পাঠালে রানা গোটা এলাকার ফসল নষ্ট করে দিয়েছিলেন। যাতে মুঘল সৈন্য খাবার না পায়। তিনি রাজধানী কুম্ভলগর থেকে তিন হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছান। রানার পক্ষে কিছু আফগানও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই যুদ্ধে রানা প্রতাপ সিংহ পরাজিত হন।
৪) টীকা লেখ : খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরার যুদ্ধ
উত্তর -
খানুয়ার যুদ্ধ - ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।মেওয়ারের রানার সংগ্রাম সিংহ রাজপুত্রের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বাবর মুঘল যোদ্ধাদের বলেন এই যুদ্ধ তাদের ধর্মের লড়াই। তারা হলেন ধর্ম যোদ্ধা বা গাজী। আসলে এভাবে তিনি সকলকে জোটবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। আবার, উত্তর ভারত থেকে বাবরকে হাটানোর জন্য কয়েকজন মুসলমান শাসক ও রাজপুদের সঙ্গে যোগ দেন। কাজেই এই যুদ্ধ ধর্মীয় যুদ্ধ ছিল না।
ঘর্ঘরার যুদ্ধ - ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আফগানদের বিরুদ্ধে বাবর এই যুদ্ধ করেন। আফগানদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার শাসক নসরাৎ শাহ। এই যুদ্ধে জিতলেও বাবর বিহারে পাকাপাকি অধিকার কায়েম করতে পারেননি।
৫) টীকা লেখ: দাক্ষিণাত্য ক্ষত
উত্তর -
দাক্ষিণাত্য ক্ষত - ঔরঙ্গজেবের সময় মারাঠাদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ঔরঙ্গজেব ভেবেছিলেন যে দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করতে পারলে সেখান থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদাই করা যাবে। তার সঙ্গে মারাঠাদের দমন করাও সহজ হবে। ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘলরা বিজাপুর ও গোলকোন্ডা দখল করেছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের আয়তন এত বড় আগে কখনো হয়নি। কিন্তু বাদশাহ যা ভেবেছিলেন তা হয় নী। তার বদলে বহু বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুঘলদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়। ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধের এই ক্ষত আর সরাতে পারেনি। মারাঠা নেতা শিবাজী কেও স্বাধীন রাজা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়। ২৫ বছর ধরে যুদ্ধ করে অরঙ্গজেব শেষে দাক্ষিণাত্যে মারা গেলেন। এই যুদ্ধের ফলে মুঘল সাম্রাজ্য সামরিক ও আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে।
৬) বারো ভূঁইয়া কাদের বলা হয় ?
উত্তর - জাহাঙ্গীরের সময় বাংলার স্থানীয় হিন্দু জমিদার ও আফগানরা মুঘলদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ করেছে। এই বিদ্রোহীরা একসঙ্গে বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত। এদের মধ্যে চাঁদ রায়, কেদার রায়, ঈশা খান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
শেষ কথা ঃ-
এই পোস্টে পঞ্চম শ্রেণীর সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় (মুঘল সম্রাজ্য) থেকে প্রশ্ন উত্তর আলচনা করা হলো। পরে আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় আসার মতো প্রশ্ন উত্তর আপডেট দেওয়া হবে।
Edu হোস্টারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url