Class 8 History Chapter 4 WBBSE Question Answer
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হলো
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস
ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র
ভেবে দেখো খুঁজে দেখো
১) ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো :
ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ------ (হেস্টিংস / কর্নওয়ালিস/ ডালহৌসি)।
উত্তর - চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন - কর্নওয়ালিস।
খ) মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ----- (বাংলায় / উত্তর ভারতে / দক্ষিণ ভারতে)।
উত্তর - মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ----- উত্তর ভারতে।
গ) " দাদন " বলতে বোঝায় ---- (অগ্রিম অর্থ / আবওয়াব / বেকার শ্রম)।
উত্তর - " দাদন " বলতে বোঝায় ---- অগ্রিম অর্থ।
ঘ) ঔপনিবেশিক ভারতে প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়েছিল ---- ( বিষড়ায় / কলকাতায় / বোম্বাইতে)।
উত্তর - ঔপনিবেশিক ভারতে প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়েছিল ---- বিষড়ায় ।
ঙ) দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে বলে --- (সম্পদের বহির্গমন / অবশিল্পায়ন / বর্গাদারি ব্যবস্থা)।
উত্তর - দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে বলে --- সম্পদের বহির্গমন।
২) নিচের বিবৃতিগুলির কোনটি ঠিক কোনটি ভুল বেছে নাও :
ক) ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়।
উত্তর - ভুল।
খ) নীল বিদ্রোহ হয়েছিল মাদ্রাজে।
উত্তর - ভুল।
গ) দাক্ষিণাত্যে তুলো চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিষয়ে জড়িত ছিল।
উত্তর - ঠিক।
ঘ) রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেড়ে গিয়েছিল।
উত্তর - ভুল।
ঙ) টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা কোম্পানি - শাসনের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল।
উত্তর - ঠিক।
৩) অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪০ টি শব্দ) :
ক) ' সূর্যাস্ত আইন ' কাকে বলে ?
উত্তর - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্যতম শর্ত অনুসারে, বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে কোম্পানির প্রাপ্য নির্দিষ্ট খাজনা কোন জমিদার কোম্পানির কোষাকারে জমা না দিলে যে আইন দ্বারা সেই জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হত, তাকে সূর্যাস্ত আইন বলা হয়।
খ) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বোঝো ?
উত্তর - কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে বোঝায় বাণিজ্যের কাজে প্রয়োজন এমন ফসলের চাষ করা। ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ভারতীয় অর্থনীতির আরেকটি দিক ছিল কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ। ব্রিটিশ আমলে বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভের জন্য যে যে ফসলের চাষ করা হতো সেগুলি হলো -- চা, নীল, পাট, তুলো প্রভৃতি । বস্তুত রেলপথ বানানো, রপ্তানির হার বাড়ানো ও কৃষিতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলে ব্যাখ্যা করা হতো।
গ) ' দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা ' কেন হয়েছিল ?
উত্তর - কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। ফলে দাক্ষিণাত্যে কার্পাস তুলোর চাষ বেড়ে যায়। কিন্তু আমেরিকার গৃহযুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর দাক্ষিণাত্যে তুলোর দাম একদম কমে যায়। তার উপরে চড়া হারে রাজস্বের চাপ ছিল কৃষকদের উপর। সেই সময় খরা ও অজন্মার ফলে কৃষক সমাজ চূড়ান্ত দুর্দশা মুখে পড়ে। সেই দুর্দশার সুযোগ নিয়েছিল স্থানীয় সাহুকার মহাজনেরা। সহুকারেরা চাষিদের ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতো। এর বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের তুলা চাষীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আহমদনগর ও পুনা জেলায় বিদ্রোহ তীব্র আকার নিয়েছিল। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলা ওই বিদ্রোহকে ঔপনিবেশিক প্রশাসন দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নাম দিয়েছিল।
ঘ) সম্পদের বহির্গমন কাকে বলে ?
উত্তর - ভারতের সম্পদকে ব্রিটেনে নানাভাবে স্থানান্তরিত করা হতো। যার বিনিময়ে ভারতকে কোন সুবিধা দেওয়া হয়নি। এইভাবে দেশের সম্পদ বিদেশে চালান হওয়াকেই সম্পদের বহির্গমন বলে ।
দুভাবে ভারত থেকে সম্পদের নির্গমন হয়েছিল, যেমন -
(১) নিজস্ব বাণিজ্য ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের অর্থ সম্পদ ইংল্যান্ডে নিয়ে যেত।
(২) ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য, নানাবিধ উপঢৌকোন ও পুরস্কার লাভের মধ্য দিয়ে কোম্পানির কর্মচারীরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে পরে তা ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিত।
ঙ) অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো ?
উত্তর - অবশিল্পায়ন বলতে শিল্পায়নের বিপরীত অবস্থা বা শিল্পের ধ্বংস সাধনকে বোঝায়। পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য, উচ্চ শুল্ক, দাদন প্রথা, ব্রিটিশ পণ্য আমদানি , প্রভৃতি কারণের ফলে নানারকম বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে ভারতের দেশীয় শিল্পগুলি ক্রমে ধ্বংস হতে থাকে। ভারতের ঐতিহ্যশালী শিল্প ব্যবস্থার বিশেষত কুটির শিল্পের যে ধ্বংস সাধন ঘটেছিল তা অবশিল্পায়ন নামে পরিচিত।
৪) নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১ ৬০টি শব্দ) :
ক) বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তর - বাংলার কৃষক সম্প্রদায়ের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অপরিসীম প্রভাব পড়েছিল, যেমন :
১) জমিতে কৃষকের মালিকানা ও দখলিস্বত্ত্ব লুপ্ত :- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের দ্বারা জমিতে জমিদারের মালিকানা স্বত্ত্ব স্বীকার করা হয়, কিন্তু কৃষকের দখলি স্বত্ত্ব স্বীকার করা হয়নি। এর ফলে কৃষকরা জমিদারের ভূমিদাসে পরিণত হয়।
২) কৃষকরা জমিদারের ইচ্ছাধীন ভাড়াটে-তে রূপান্তরিত :-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় লর্ড কর্নওয়ালিস আশা করেছিলেন যে, জমিদাররা জমির স্বত্ত্বলাভ করে পাট্টার দ্বারা কৃষকদের জমির দখলি - স্বত্ত্ব প্রদান করবেন। কিন্তু নানা কারণে, পাট্টা প্রদানে জমিদারের অসহযোগিতা এবং পাট্টা গ্রহণে কৃষকদের অনীহার ফলে পাট্টা প্রথা কার্যকরী হয়নি। ফলে কৃষকরা জমিদারের ইচ্ছাধীন ভাড়াটে হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়।
৩) কৃষকদের উপর অত্যাচার :-
চিরস্থায়ী ব্যবস্থায় জমিদাররা নির্দিষ্ট রাজস্ব ছাড়াও নানান উপরি আদায়ের জন্য কৃষকদের উপর অত্যাচার করতে থাকে এবং বহুগুণ বেশি রাজস্ব আদায় করতে থাকে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমির চাহিদার সুযোগ নিয়ে কৃষককে জমি থেকে উচ্ছেদ করে জমিদাররা। ফলে বাংলার কৃষকের জীবন অতিষ্ঠ ও ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।
৪) পাটনি প্রথার কুপ্রভাব :-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পাটনি ব্যবস্থায় জমির ছোট মালিকরা অতিরিক্ত খাজনার জন্য প্রজাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করতে থাকে।
এছাড়াও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকদের উপর জমিদার ছাড়া মহাজন শ্রেণীর শোষণ ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অত্যাচার চরমে ওঠে।
খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সঙ্গে রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারী বন্দোবস্ত গুলির তুলনামূলক আলোচনা করো। তিনটির মধ্যে কোনটি কৃষকদের জন্য কম ক্ষতিকারক বলে তোমার মনে হয় ? যুক্তি দিয়ে লেখো।
উত্তর - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সঙ্গে রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারী বন্দোবস্ত গুলির তুলনামূলক আলোচনা :-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত | রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত | মহলওয়ারি বন্দোবস্ত |
---|---|---|
i) বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু ছিল। | i) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে মাদ্রাজ ও মুম্বাই প্রেসিডেন্সির কিছু অংশে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু ছিল। | i) গাঙ্গেয় উপত্যকায়, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ দিল্লি এবং পাঞ্জাবে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু ছিল। |
ii) কোম্পানি রাজস্ব আদায় করত জমিদারের কাছ থেকে। | ii) রায়ত বা চাষীর কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করত। | ii) গ্রামের মুখিয়া বা গ্রাম প্রধানের থেকে রাজস্ব আদায় করত। |
iii) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদার ইচ্ছামত রাজস্বের হার নির্ধারণ করতে পারতো। | iii) রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে ২০-৩০ বছর অন্তর খাজনার হার বৃদ্ধি পেত।খাজনার হাড় ছিল উৎপন্ন ফসলের ৪৫% থেকে ৫৫% । | iii) মহলওয়াড়ি বন্দোবস্তে প্রতি ৩০ বছর অন্তর জমির খাজনা বৃদ্ধি পেত। খাজনারহাট যথেষ্ট চড়া ছিল। |
এই তিনটি ভূমি বন্দোবস্তের মধ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকদের পক্ষে কম ক্ষতিকারক ছিল।
যদিও কোন ভূমি বন্দোবস্তই কৃষকদের জন্য কল্যাণকর হয়নি। তথাপি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তুলনামূলকভাবে কৃষকদের পক্ষে কম ক্ষতিকারক ছিল।
যুক্তি :-
১) তিনটি ভূমি বন্দোবস্তের মধ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে খাজনারা হার কম ছিল।
২) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কিছু মহানুভব জমিদারের সৃষ্টি হয়, তারা কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষকের উন্নতিতে সচেষ্ট হন। তারা স্থানীয় পথঘাট নির্মাণ ,পুকুর খনন সহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। বন্যা ও খরার সময় অর্থ সাহায্য করেন এবং কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় সাময়িক বন্ধ রেখে এরা উদারতার পরিচয় দেন।
৩) ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর বাংলার এক তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি ও পতিত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জমিদার এই পতিত জমি আবাজযোগ্য করে কম খাজনায় কৃষকদের হাতে তুলে দেন। ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ে। এতে কৃষক ও জমিদার উভয়ই লাভবান হন।
গ) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের সঙ্গে কৃষক-অসন্তোষ ও বিদ্রোহের কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল ? সেই নিরিখে 'দাক্ষিণাত্যের হাঙ্গামা ' কে তুমি কিভাবে বিচার করবে ?
উত্তর - ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ কি কি কাজ ভারতবর্ষের প্রধান পেশা। ভারতবাসী প্রধানত খাদ্যশস্যের চাষ করত। ইংরেজ আমলে বাণিজ্যিক ফসল যেমন চা, কফি, তুলা, নীল চাষ শুরু হলে এবং চড়া রাজস্ব ধার্য হলে কৃষক অসন্তোষ ও বিদ্রোহ ঘটে।
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। পিসির বাণিজ্যিকীকরণের জন্য পূর্ব ভারতের নীল চাষীরা এবং দক্ষিণ ভারতের তুলো চাষিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের ফলে সাধারণ ভারতীয় কৃষক লাভবান হতে পারেনি। বাস্তবে কৃষি উন্নতির বেশিরভাগ সুযোগ-সুবিধাটাই আর্থিকভাবে শক্তিশালী কৃষিজীবীরা কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। তাই সুফল টুকু ও তারাই পেয়েছিলেন। অধিকাংশ কৃষকেরই এর ফলে কোন লাভ হয়নি। চড়াহারে রাজস্ব আদায়ের জন্য কৃষি থেকে কৃষকের উপার্জন কম হত। লাভ হত ঔপনিবেশিক সরকার, জমিদার ও মহাজনদের। ব্রিটিশ সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করত না। অপরদিকে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ ও প্রশাসন কৃষক শোষণকারীদের রক্ষা করতো।
দাক্ষিণাত্যের হাঙ্গামা :-
কিসের বাণিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে কার্পাস তুলে চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল তার ফলে দাক্ষিণাত্যে কার্পাস তুলোর চাষ বেড়ে যায়। কিন্তু আমেরিকার গৃহযুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর দাক্ষিণাত্যে তুলোর দাম একদম কমে যায়। তার উপরে চড়াহারে রাজস্বের চাপ ছিল কৃষকের উপর। সেই সময় খোঁড়া ও ওজন্মার ফলে কৃষক সমাজ চূড়ান্ত দুর্দশার মুখে পড়েছিল। সেই দুর্দশার সুযোগ নিয়েছিল স্থানীয় সাহুকার মহজনেরা। সহকারীরা চাষীদের ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতো। এর বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের তুলো চাষিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ওই বিদ্রোহ চলে। আহমদনগর ও পুনা জেলায় বিদ্রোহ তীব্র আঁকা নিয়েছিল।
কৃষি প্রধান ভারতবর্ষে কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল কিসের বাণিজ্যিকীকরণ ও চড়া ভূমি রাজস্ব।
ঘ) বাংলার বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্যনীতির কী ধরনের সম্পর্ক ছিল ? কেন দেশীয় ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি তৈরি করেন ভারতীয়রা ?
উত্তর - বাংলা ছিল ভারতের অন্যতম বস্ত্র শিল্প কেন্দ্র। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় আসার পর বাংলা থেকে সুতি বস্ত্র কিনে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। বাংলার কাপড় এত সস্তা ছিল যে ইংল্যান্ডের তৈরি কাপড় প্রতিযোগিতায় তার সঙ্গে পেরে উঠত না। এই অবস্থায় বাংলার বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্য নীতি নির্ধারিত হয়।
১) সরকারের বৈষম্য মূলক শুল্কনীতি :- ইংল্যান্ডের জিনিসপত্র যাতে অবাধে ভারতে আসতে পারে তার জন্য কোম্পানি আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে, ভারত থেকে রপ্তানি করা পণ্যের উপর উঁচু পাহাড় রপ্তানি শুল্ক ধার্য করা হয়। সরকারের বৈষম্যমূলক শুল্কনীতি ছিল কোম্পানির আমলে দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।
২) বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোম্পানির একচেটিয়া কর্তৃত্ব :-
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর ভারতীয় বাণিজ্য ক্ষেত্রের ইংরেজ কোম্পানির একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয় শিল্পী ও কারিগরিদের লোকসানের সীমা ছিল না।
৩) আবাদ বাণিজ্য নীতি :-
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের মাধ্যমে অবাধ বাণিজ্যের যুগে দামের সস্তা কিন্তু মানে উন্নত বিলাতি পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্যের পরাজয় ছিল ঊনিশ শতকে ভারতীয় হস্তশিল্প ধ্বংসের প্রধান কারণ।
ভারতীয় ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি তৈরির কারণ :-
১)ভারতীয়রা সহজে ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য দেশীয় ব্যাংক তৈরি করে।
২) ভারতীয়রা নিজেদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বীমা কোম্পানি তৈরি করে।
৩) স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতীয় পুঁজিপতিরা দেশীয় ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলি তৈরি করেছিল।
ঙ) ভারতে কোম্পানি শাসন বিস্তারের প্রেক্ষিতে রেলপথ ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশের তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর - ভারতে কোম্পানি শাসন বিস্তারের প্রেক্ষিতে রেলপথ ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশের তুলনামূলক আলোচনা :-
রেল পথ :-
লর্ড ডালহৌসের আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়। ডালহৌসির মূল উদ্দেশ্য ছিল এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের দ্রুত সেনাবাহিনীর যাতায়াত নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বন্দর, শহর ও বিভিন্ন বাজার এবং কাঁচামাল উৎপাদনের জায়গা গুলিকে রেলপথ দিয়ে সহজে যুক্ত করার পরিকল্পনাও ছিল। ফলে ভারতের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের বাণিজ্যের উপযোগী করে তোলার সহজ হতো। ১৮৫৮ থেকে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৭ কোটি পাউন্ডেরও বেশি মূল্য হন ভারতের রেলপথ নির্মাণের কাজে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ রক্ষায় রেলপথ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রচুর ব্রিটিশ পণ্য বন্দরগুলি থেকে দেশের ভেতরের বাজার গুলিতে রেলপথের সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হতো। তার জন্য ভাড়া লাগতো খুবই কম। অথচ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রপ্তানির জন্য পণ্য বন্ধুরা আনতে হলে রেলে অনেক বেশি ভাড়া লাগতো। সেইভাবে কাঁচামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও রেল ভাড়ার বৈষম্য ছিল।
টেলিগ্রাফ :-
১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মাত্র কয়েক মাইল দূরে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু হয়। তবে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে ৪৬ টি টেলিগ্রাফ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রায় চার হাজার ২৫০ মাইলের বেশি অঞ্চল টেলিগ্রাফ যোগাযোগের আওতায় এসে গিয়েছিল। ফলে কলকাতা থেকে আগ্রা এবং উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলি এবং মুম্বাই, মাদ্রাজ ও ওটাকামুন্দ প্রভৃতি অঞ্চলে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ বিস্তৃত হয়েছিল।
টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশের পেছনে উপনিবেশিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল। উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমস্ত জরুরি সংবাদ ও তথ্য অতি দ্রুত শাসন কেন্দ্র গুলিতে পৌঁছানোর দরকার ছিল। সেই কাজে টেলিগ্রাফ সবথেকে বেশি সহায়ক ও নির্ভরযোগ্য ছিল।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
১) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি ?
উত্তর - লর্ড কর্নওয়ালিসের আমলে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্বের বিনিময়ে জমিদার শ্রেণীকে বংশানুক্রমিকভাবে জমির মালিকানা দান করার যে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় তাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলা হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথমে বাংলা বিহার ও পরবর্তীকালে উড়িষ্যায় চালু হয়েছিল।
২) পাঁচসালা ও দশসালা বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন ?
উত্তর - পাঁচসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন ওয়ারেন হেস্টিংস।
দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন লর্ড কর্নওয়ালিস।
৩) রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত কী ?
উত্তর - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ভারতে যে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করে তা রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
৪) মহলওযারি বন্দোবস্ত কাকে বলে ?
উত্তর - গাঙ্গে উপত্যকায় বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি ও পাঞ্জাবে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক কৃষকের সঙ্গে সরাসরি ভূমি রাজস্বের বন্দোবস্ত না করে সমষ্টিগতভাবে এক একটি গ্রাম বা মহলের সঙ্গে যে ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয় তা মহলওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
৫) দাদন কি ?
উত্তর - দাদন কথার অর্থ অগ্রিম। পলাশীর যুদ্ধের পর কর্মচারী, দেশীয় এজেন্ট বা গোমস্তাদের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশীয় তাঁতিদের দাদন বা অগ্রিম দিত। কোম্পানির দাঁতন গ্রহণ করায় তাঁতীরা শুধুমাত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছাড়া আর অন্য কোথাও উৎপন্ন দ্রব্য বিক্রি করতে পারত না এবং কম দামে লোকসান স্বীকার করেও তারা উৎপন্নবস্ত্র কোম্পানিকে বিক্রি করতে বাধ্য থাকতো।
৬) কোন আইনে ভারতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলা হয় ?
উত্তর - পিটের ভারত শাসন আইন।
৭) মসলিন কি ?
উত্তর - বাংলার এক ধরনের মিহি বস্ত্র।
৮) ইংরেজি কোন সালে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয় ?
উত্তর - ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে।
৯) কত সালে ভারতে রেলপথ নির্মাণ শুরু হয় ?
উত্তর - ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
১০) ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর কোন পত্রিকাতে প্রকাশ পায় ?
উত্তর - সঞ্জীবনী পত্রিকাতে প্রকাশ পায়।
১১) কত সালে বাংলায় নীল বিদ্রোহ ঘটেছিল ?
উত্তর - ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে।
শেষ কথা ঃ-
এই পোস্টে Class 8 History Chapter 4 থেকে প্রশ্ন উত্তর আলচনা করা হলো। পরে আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় আসার মতো প্রশ্ন উত্তর আপডেট দেওয়া হবে।
Edu হোস্টারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url