ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ বলতে কি বোঝো Class 7

 ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ - মিনিয়েচার - ক্যালিগ্রাফি  সপ্তম শ্রেণি

ভক্তিবাদ , সুফিবাদ , মিনিয়েচার , ক্যালিগ্রাফি , সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন কোন ফল সবজি এবং সর্ষের চাষ সবচেয়ে বেশি হতো আলোচনা করা হলো।


১) ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ বলতে কী বোঝো ?

ভক্তিবাদের মূলে ছিল ভগবানের প্রতি ভক্তের ভালোবাসা বা ভক্তি । এই ভক্তির দুটি বৈশিষ্ট্য ছিলো। একটি হলো ভগবানের পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করা। অন্যটি হলো ঈশ্বর লাভের জন্য জ্ঞান বা যোগ ছেড়ে ভক্তের ভক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া।

ভক্তিবাদ উত্থানের কারণ কি ? হর্ষবর্ধনের পতনের পরে কয়েকজন রাজপুত রাজা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এদের সমর্থন করে ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা । তখন রাজপুত এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠে । এর ফলে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বাইরে নতুন কোন ধর্ম ভাবনা তখনকার উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠা পেতে পারেনি।তবে সে সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু কিছু মানুষ ভক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিল। নাথপন্থী , যোগী ইত্যাদি ধর্মীয় গোষ্ঠীরা এর প্রমাণ । তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতি পেয়েছিল । দক্ষিণ ভারতের অলভার এবং নায়নার সাধকরা।

ঐ সময় ব্রাহ্মণ্যধর্ম ,বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম মানুষের জীবনে অচল হয়ে পড়েছিল । কারণ এই ধর্মমত গুলি অযথা রীতিনীতি উপর জোর দিত বা চূড়ান্তভাবে অসাংসারিক জীবন যাপন করতে বলতো। এতে না ছিল মানুষের আবেগের জায়গা, না ভালো থাকার চাবিকাঠি । এরকম অবস্থায় সরল সোজা তামিল ভাষায় নিজের ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা জানায় আলভার এবং নায়নার সাধকরা । এতে আকৃষ্ট হয় সাধারণ মানুষ ।

 ভক্তির এই ধারা  ক্রমশ উত্তর এবং পূর্ব ভারতের ছড়িয়ে পড়ে । তুর্কিরা উত্তর ভারত আক্রমণ করলে। তাদের কাছে হেরে যাওয়ায় রাজপুত রাজাদের ক্ষমতা কমে আসে। তার সাথে সাথে কমে যায় তখনকার সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনে ব্রাহ্মণদের দাপট । নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবীর ,নানক ,শংকরদেব, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ ভক্তিবাদের প্রচার শুরু করেন । ভারতবর্ষের নানা দিকে শোনা যেতে থাকে তাদের কথা, লেখা ,কবিতা এবং গান ।


 সুফিবাদ :- 

     নিজেদের মতো করে ভগবানকে ডাকার ইচ্ছা কিন্তু হিন্দু ধর্মের মানুষদের বা বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যেই সীমিত ছিল না। বিভিন্ন ধর্মীয় আইন কানুনের বাইরে বহু মুসলমান ঈশ্বরকে নিজের মতো করে আরাধনা করার পথ খুঁজছিলেন । সুফিসন্তরা তাদেরকে এই পথ দেখায়। সুফিদের আবির্ভাব মধ্য এশিয়ায়। ধীরে ধীরে ভারতেও সুফিবাদ যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । অনেকের মতে, সুফি  কথাটি আসে "সুফ" থেকে যার অর্থ আরবিতে 'পশমের তৈরি এক টুকরো কাপড়'।বিশ্বাস করা হয় যে,এরকম কম্বল জাতীয় জিনিস গায়ে দিতেন সুফি সাধকরা।


ভারতের মাটিতে সুফিবাদ যখন দানাবাতছিল সে সময়ে ভক্তিবাদ ছাড়াও নাথপন্থী ও যোগীরা তাদের ধর্ম প্রচার করেছিল । এই সব কটি তখনকার প্রতিষ্ঠিত ধর্ম গুলির আচার-আচরণের বিরুদ্ধে ছিল । এদেশে মূলত দুটি গোষ্ঠীর সুফিরা ছিল প্রভাবশালী । দিল্লি ও দোয়াব অঞ্চলে  চিশতি এবং সিন্ধু পাঞ্জাব ও মুলতানে সোহরাবর্দিরা। ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মইনউদ্দিন চিশতী । শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন এই গোষ্ঠী বা  অন্যতম সাধক । চিশতি সুফিদের জীবন ছিল খোলা মেলা । তারা ধর্ম, অর্থ,ক্ষমতার মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করতেন না ।


এছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েকটি সহজিয়া ধারার মতো সুফিও ছিল একটি সাধন ধারা । সুফি সিলসিলা গুলির প্রধান ব্যক্তি হতেন কোন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাধক । তিনি তার শিষ্যদের সঙ্গে থাকতেন খানকায় বা আশ্রমে । সুফি ধারায় পীর বা গুরু এবং মুরিদ অর্থাৎ শীর্ষের সম্পর্ক ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পীররা তাদের ধর্ম ভাবনা ও দর্শন দিয়ে যেতেন বেছে নেওয়া খলিফা বা উত্তরাধিকারীদের কাছে। সেটাই ছিল নিয়ম।


সংক্ষেপে ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের পার্থক্য ঃ-

ভক্তিবাদ হলো হিন্দু ধর্ম ভিত্তিক ভগবানের প্রতি প্রেম ও ভক্তি এবং সুফিবাদ হলো ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা ।  


ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের লক্ষ্য ছিল ঈশ্বর প্রেম ও মানব কল্যান। তবে তারা আলাদা ধর্মীয় পটভূমি থেকে উদ্ভূত হয়ে সমাজের অনুশাসন , ভেদাভেদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মানবতাবাদী চেতনা প্রচার করেছে। 



২) ক্যালিগ্রাফি বলতে কী বোঝায় ?

উত্তর:- সুলতানি যুগে বই এবং পান্ডুলিপিতে ছবি আঁকার চল দেখা যায় । সুন্দর হাতের লেখা, রঙিন ছবি সব মিলিয়ে বইগুলি সুদৃশ্য হয়ে উঠতো । কল্পসূত্র , কালচক্রকথা প্রভৃতি বইগুলিতে এ ধরনের লেখা ও ছবির ব্যবহার দেখা যায় । এই চিত্রশিল্পীরা প্রধানত পশ্চিম ভারতের বাসিন্দা ছিলেন । সুলতানি চিত্রশিল্পের ধারা মুঘল যুগে আরও পরিণত ও উন্নত হয়ে ওঠে । সুন্দর হাতের লেখার শিল্প সেকালে খুব চর্চা হতো একে ইংরেজিতে বলে ক্যালিগ্রাফি । বাংলায় হস্তলিপিবিদ্যা বা হস্তলিপিশিল্প বলা যেতে পারে । ছাপাখানার রেওয়াজ ছিল না । তখন হাতে লেখা বইগুলি ছিল শিল্পীর নমুনা।



৩) মিনিয়েচার বলতে কী বোঝায় ?

উত্তর:- সম্রাট আকবরের সময়ে বইয়ের অলংকরণ শিল্পের আরো নমুনা পাওয়া যায়। তুতিনামা, রজমনামা প্রভৃতি বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা সাজানো হতো সুক্ষ হস্তলিপি এবং ছবি দিয়ে। আঁকার এবং আয়তনে ছোট এই ছবিগুলিকে বলা হয় মিনিয়েচার । মিনিয়েচার কথাটা ইংরেজি, তবে সেটাই  বেশি প্রচলিত। বাংলায় তাকে অনুচিত্র বলা যেতে পারে । সোনার রং এবং অন্যান্য রঙের ব্যবহার হতো বইতে । তাতে জ্বলজ্বল করতো পৃষ্ঠাগুলি । লেখার চারপাশে নানা রকম অলংকরণ করা হতো ।



 ৪সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন কোন ফল, সবজি এবং সর্ষের চাষ সবচেয়ে বেশি হতো ?

উত্তর:- সুলতানি ও মুঘল যুগে গাঙ্গেয় সমভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে আমের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল আঙ্গুর ,খেজুর, জাম, কলা ,কাঁঠাল ,নারকেল , যব , ধান প্রভৃতি ফলের চাষ হতো । নানা রকম ফুল, চন্দনকাঠ, ঘৃতকুমারী এবং নানা ভেষজ উদ্ভিদ ভারতে হতো লংকা আদা এবং অন্যান্য মসলা চাষ হতো । 



শেষ কথা ঃ -

এই পোস্টে Class vii history ভক্তিবাদ - সুফিবাদ - মিনিয়েচার-ক্যালিগ্রাফি - সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন কোন ফল সবজি এবং সর্ষের চাষ সবচেয়ে বেশি হতো তা আলচনা করা হলো। পরবর্তী সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় আসার মতো প্রশ্ন উত্তর আপডেট দেওয়া হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu হোস্টারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url