অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর

অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয়  অধ্যায় ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হলো। Class 8 history chapter 3 Wbbse question answer


ভেবে দেখো            খুঁজে দেখো 

১) বেমানান শব্দটি খুঁজে বার করো :

ক) বোম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতা, বাংলা।

উত্তর - বেমানান শব্দটি হল বাংলা



খ) ক্লাইভ, হেস্টিংস, দুপ্লে, কর্নওয়ালিস।

উত্তর - বেমানান শব্দটি হল দুপ্লে



গ) বাংলা, বিহার, সিন্ধু প্রদেশ, ওড়িষ্যা।

উত্তর - বেমানান শব্দটি হল সিন্ধু প্রদেশ



ঘ) ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম কেরি, জোনাথন ডানকান, উইলিয়াম পিট।

উত্তর - বেমানান শব্দটি হল উইলিয়াম পিট ।



২) নিচের বিবৃতি গুলির কোনটি ঠিক কোনটি ভুল বেছে নাও। 

ক) বাংলা প্রেসিডেন্সিকে সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি বলা হতো।

উত্তর - ভুল।



খ) বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জোনাথন ডানকান।

উত্তর - ঠিক।



গ) উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুরের মিশনারি সোসাইটির সদস্য।

উত্তর - ঠিক।



ঘ) দশ বছরের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য কোম্পানি ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেছিল।

উত্তর - ভুল।



৩) অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও ( ৩০-৪০ টি শব্দ) :


ক) ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে ?

উত্তর - ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আদতে ছিল একটি বণিক সংস্থা। ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের স্বার্থে তারা কতগুলি ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে ছিল মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতা। এই তিনটি বাণিজ্য ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল।



খ) কোম্পানি-পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে লর্ড কর্নওয়ালিস কি ভূমিকা নিয়েছিলেন ?

উত্তর - লর্ড কর্নওয়ালিস প্রচলিত আইন গুলিকে সংহত করে কোড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। তার ফলে দেওয়ানী সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা করা হয়। জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করা হয়। কাঠামোকে সম্ভবত করার মাধ্যমে সেগুলি হয়ে উঠেছিল ওই উপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।



গ) কোম্পানির সিপাহী বাহিনী বলতে কী বোঝো ?

উত্তর - ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যেকোনো উপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতার মোকাবিলা করতো পুলিশ বাহিনী। তবে পরিস্থিতি ঘোরতর হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়তো সেনাবাহিনীর। ফলে ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বেড়ে উঠেছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী। উত্তর ভারতে কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হতো। মুঘল সেনা নিয়োগের পরম্পরা অনুসরণ করেছিল ব্রিটিশরা।এমনকি সিপাহীদের সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সেই প্রথা মেনেই কোম্পানিও নিজের ভারতীয় সেনা বা সিপাহী বাহিনী তৈরি করেছিল, তাকে কোম্পানির সিপাহী বাহিনী বলা হতো।



ঘ) কোম্পানি-শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেল- এর কি ভূমিকা ছিল ?

উত্তর - ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করেন জেমস রেনেল। তিনি ছিলেন একজন সার্ভেয়ার। তাকে ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে। বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করে তিনি মোট ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। সেই মানচিত্র গুলি ছিল বাংলার নদী পথের প্রথম মানচিত্র। 



৪) নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১৬০ শব্দ):

ক) ওয়ারেন হেস্টিংস ও লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের তুলনামূলক আলোচনা করো। ওই সংস্কারগুলির প্রভাব ভারতীয়দের উপর কিভাবে পড়েছিল ?

উত্তর - গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও কর্নওয়ালিস বাংলার বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন। উভয়ের বিচার সংস্কারের মধ্যে কিছু মিল ও অমিল ছিল। 


মিলসমূহ :-

i) উভয়ই বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করি ইউরোপীয় বিচারপতিদের সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন। তারা ইউরোপীয় বিচারকদের ভারতীয় সহকারীদের উপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন। 

ii) উভয় ই আইন গুলিকে বিধিবদ্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস হিন্দু ও মুসলমান আইনগুলি পৃথকভাবে সংকলন করেছিলেন। পরে তিনি এগুলির ইংরেজি অনুবাদ করেন। কর্নওয়ালিস এই আইন গুলিকে সংকলন করে কোড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেছিলেন 

iii) বই সব আদালত গুলিতে একই নিয়মে আনার পক্ষে ছিলেন। 


অমিলসমুহ:-

i) হেস্টিংস ভ্রাম্যমান আদালত স্থাপনের কথা ভাবেননি। অন্যদিকে কর্নওয়ালিশ চারটি ভ্রাম্যমান আদালতে স্থাপন করেন। 

ii) হেস্টিংস বিচার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সহায়তা নিয়েছিলেন। অন্যদিকে কর্নওয়ালিশ সব আদালতে ইউরোপীয় বিচারপতি নিয়োগ করেছিলেন এবং বিচার ব্যবস্থা থেকে ভারতীয়দের পুরোপুরি বাদ দিয়েছিলেন। 

ওয়ারেন হেস্টিংস ও কর্নওয়ালিস এর বিচারব্যবস্থা সংস্কারে ভারতীয়দের উপর প্রভাব :-

ওয়ারেন হেস্টিংস ও কর্নওয়ালিস এর বিচারব্যবস্থা সংস্কারের ফলে ভারতীয় ভিসার ব্যবস্থার আধুনিকরণের সূচনা হয়। সারাদেশে একই আইন প্রবর্তিত হয়। বিচার বিভাগের সমস্ত আদেশ তখন থেকেই লিখে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। 



খ) ভারতে কোম্পানির শাসনের বিস্তার ও সেনাবাহিনীর বৃদ্ধির মধ্যে কি সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয় ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও ।

উত্তর - ভারতে কোম্পানির শাসনের বিস্তার ও সেনাবাহিনী বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক :- 
প্রাথমিকভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের যেকোনো বিরোধিতার মোকাবেলা করতো পুলিশবাহিনী। তবে পরিস্থিতি ঘোরতর হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়তো সেনাবাহিনীর। ফলে ভারতের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সমানুপাতিকভাবে বেড়ে উঠেছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীদের সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সেই প্রথা মেনে কোম্পানিও নিজের ভারতীয় সেনা বা সিপাহীবাহিনী তৈরি করেছিল। সেনাবাহিনীতে সিপাহী নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল। কোম্পানির হয়ে এলাকার দখল করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করাও সিপাহীদের কাজ ছিল। উপনিবেশিক শাসনের গোড়ার দিকে সেনাবাহিনীতে প্রচলিত জাতভিত্তিক ধারণা গুলির বিরোধিতা করেনি ব্রিটিশ কোম্পানি। ফলে সিপাহী বাহিনীতে উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকরা সহজেই জায়গা করে নিতো। ফলে সিপাহী বাহিনীতে জাতভিত্তিক মনোভাব দেখা যায়। 

১৮২০-র দশকে সিপাহী বাহিনীর কাঠামোয় বেশ কিছু বদল আনা হয়। মারাঠা,মহীশূর অঞ্চলের পাহাড়ি উপজাতি ও নেপালি গোর্খাদের সিপাহী বাহিনীতে নিয়োগ শুরু হয়।
উপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে সেনাবাহিনী ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ফলে হাজার ১৮৮০ র দশকে ব্রিটিশ কোম্পানির সেনাবাহিনীতে প্রায় ২,৫০,০০০ সিপাহী ছিল।




গ) ব্রিটিশ কোম্পানির প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ছিল ? কীভাবে আমলারা একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ?

উত্তর - ঔপনিবেশিক শাসকের প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র। ইংরেজ সরকারের গৃহীত নীতি গুলি প্রয়োগ করাই ছিল আমাদের কাজ। তবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা ছিল না। ফলে একটি সংগঠিত আমলাতন্ত্র ঔপনিবেশিক শাসনের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ছিল। 

কোম্পানি প্রশাসনের অধীনে আমরা তন্ত্র কে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে লর্ড কর্নওয়ালিস সিভিল সার্ভিস বা অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চেয়েছিলেন কর্নওয়ালিস। তার ধারণা ছিল, উপযুক্ত বেতন না পাওয়ার ফলেই কর্মচারীরা সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে না। ফলে কর্নওয়ালেশ আইন জারি করে কোম্পানি প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ব্যবসা ও কোনরকম উপহার নেওয়া বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের ভিত্তিতে সিভিল সার্ভেন্টদের পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করেন। প্রশাসনের কর্মচারীদের বেতনও বাড়িয়ে দেন। 

লর্ড ওয়েলেসলি ইউরোপীয় প্রশাসন কি ভালোমতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেজন্য ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সিভিল সার্ভেন্টরা ওই কলেজে শিক্ষা পেতেন। একই কলেজে পড়ার ফলে সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যে একটি ঐক্যবোধ তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সিভিল সার্ভেন্টরা নিজেদের একটি আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ওই ঐক্যবোধ ও সংকীর্ণ গোষ্ঠী ভাবনা উপনিবেশিক প্রশাসনের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল।



ঘ) কোম্পানি - শাসনের শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে বোম্বাইয়ের কোন তফাৎ ছিল কী ? কোম্পানির শিক্ষানীতির প্রভাব ভারতীয় সমাজে কিভাবে পড়েছিল বলে তোমার মনে হয় ?

উত্তর - কোম্পানি - শাসনের শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে বোম্বাইয়ের কোন তফাৎ :- 

i) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার শিক্ষানীতিতে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় জোর দেওয়া হয়। অন্যদিকে, মুম্বাই প্রেসিডেন্সির শিক্ষা নীতিতে ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় জোর দেওয়া হয়। 

ii) বাংলা প্রেসিডেন্সির প্রশাসকরা মনে করতেন শুধুমাত্র কলকাতা নয় সব জায়গায় ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা চর্চা হওয়া উচিত। অন্যদিকে, মুম্বাই প্রেসিডেন্সির প্রশাসকেরা মনে করতেন কেবল মুম্বাই শহরের মধ্যেই ইংরেজি ভাষায় পড়াশুনা হওয়া দরকার। 


ভারতীয় সমাজে ব্রিটিশ শিক্ষানীতির প্রভাব :- 

পাশ্চাত্য শিক্ষানীতির ফলে ভারতীয় সমাজের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয় এবং তারা ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হয়। বাস্তবে সার্বিক গণ শিক্ষার কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষাকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ফলে শিক্ষা বিস্তারের গণমুখী চরিত্র তৈরি তৈরি হয়নি। পাশাপাশি হাতে-কলমে শেখার ব্যবস্থা না থাকায় কেবল পুঁথিগত চর্চার উপরেই শিক্ষার বিস্তার নির্ভর করেছিল। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অনেক ক্ষেত্রেই নির্বিচার সমর্থনের ফলে ভারতীয় প্রচলিত শিক্ষারচর্চা ক্রমে অবলুপ্তির মুখোমুখি হয়েছিল। নারী শিক্ষার বিষয়টিকেও অবহেলা করা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতিতে। ব্যক্তিগত কয়েকজনের উদ্যোগে নারী শিক্ষার বিশ্বাস শুরু হয়।



ঙ) কোম্পানি শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের সম্পর্ক কী ছিল ? ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে নেওয়ার পিছনে কী কী কারণ ছিল ?

উত্তর - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের বিশেষ সম্পর্ক ছিল - 

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার শাসনাধীন এলাকায় জমির নির্দিষ্ট আয়তন সম্পর্কে ধারণা, জমি জরিপ করে তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ণয় এবং কোম্পানির শাসনাধীন এলাকায় কতটা জমি চাষযোগ্য তা পরিমাপ করতে চেয়েছিল।

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার নতুন নবাব মীরজাফরের থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২৪টি পরগনার জমিদারি পায়। তখন রবার্ট ক্লাইভ নতুন জমিদারি মাপচক এর জন্য একদল জরিপবিদের খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কল্যান্ড নতুন ২৪ পরগনার জমি জরির কাজ শুরু করেন। তবে কাজ শেষ হবার আগেই তিনি মারা যান। তার কাজ শেষ করেন হগ ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি জেমস রেনেলকে ক সার্ভেযার জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করে। তিনি বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করে মোট ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন।

ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে নেওয়ার কারণ :-

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস নতুন ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত চালু করেন। তাতে যে ব্যক্তি জমির নিলামে সবচেয়ে বেশি খাজনা দেওয়ার ডাক দেবে তার সঙ্গে কোম্পানি ওই জমির বন্দোবস্ত করবে। পাঁচ বছরের জন্য ওই জমি ওই ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হতো বলে ওই বন্দোবস্ত কে ইজারাদারি বন্দোবস্ত বলা হতো।

নিলামের মাধ্যমে জমির ইজারা দিয়ে সর্বাধিক রাজস্ব আদায় করা, বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির স্বার্থে পরিচালিত করা ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করার উদ্দেশ্যে ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা হয়েছিল। 

ইজারাদারি বন্দোবস্ত তুলে নেওয়ার কারণ  :-

 ইজারাদারি বন্দোবস্তের বেশকিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। অনেক ইজারাদারই গ্রাম সমাজের বাইরের লোক হওয়ায় ঠিকমতো রাজস্ব নির্ণয় করতে পারেননি। হলে অনেক ক্ষেত্রেই ধার্য করা রাজস্ব বাস্তব রাজস্ব থেকে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই অনেক ইজারাদার রাজস্ব শোধ করতে পারেনি। আরো নানা কারণে ইজারাদারি বন্দোবস্ত তুলে নেওয়া হয়।



-: অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর :-


১) কত খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করে।

উত্তর - ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।




২) কে কত সালে বেনারসে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর - ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান বেনারসের সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 




৩) কে কত সালে কলকাতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর - ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ওয়ারেন হেস্টিংস মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে।




৪) কে কত সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর - ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জোন্স কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। 




৫) কত সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপন করা হয় ?

উত্তর - ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট  মিশন স্থাপন করা হয়।




৬) কে কত সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর - ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।




৭) কে প্রথম বাংলার নদী পথগুলির মানচিত্র তৈরি করেন ?

উত্তর - জেমস রেনেল প্রথম বাংলা নথিপথ গুলির মানচিত্র তৈরি করেন।




৮) ইজারাদারি ব্যবস্থা কে প্রবর্তন করেন ?

উত্তর - ওয়ারেন হেস্টিংস। 




৯) ইজারাদারি ব্যবস্থার মেয়াদ কত দিন ছিল ?

উত্তর - পাঁচ বছর। 




১০) ইজারাদারি বন্দোবস্তের অপর নাম কী ?

উত্তর - পাঁচসালা বন্দোবস্ত। 




১১) কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ?

উত্তর - লর্ড কর্নওয়ালিস।




১২) কোন প্রেসিডেন্সিকে সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি বলা হত ?

উত্তর - মাদ্রাস প্রেসিডেন্সিকে। 



১৩) মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির গ্রীষ্মকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র কোনটি ছিল ?
উত্তর - ওটাকামুন্দ।




১৪) বাংলা প্রেসিডেন্সি অপর কি নামে পরিচিত ছিল ?

উত্তর - ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ প্রেসিডেন্সি। 




১৫) কত খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয় ?

উত্তর - ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে। 




১৬) গভর্নর জেনারেলের পদের মেয়াদ ছিল কত বছর ?

উত্তর - পাঁচ বছর। 




১৭) সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন ?

উত্তর - স্যার এলিজা ইম্পে।




১৮) মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কে চালু করেছিলেন ?

উত্তর - লট উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। 




১৯) ঠগি দস্যু দমনে কে বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন ?

উত্তর - উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। 




২০) ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশ আমলে কি নামে পরিচিত ছিল ?

উত্তর - সিপাহী। 




২১) কি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর - লর্ড ওয়েলেসলি। 




২২) আলেকজান্ডার ডাফ কে ছিলেন ?

উত্তর - স্কটিশ মিশনারি। 



২৩) বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করে রেনেল কতগুলো মানচিত্র তৈরি করেন ?

উত্তর - ১৬ টি। 




২৪) রেগুলেটিং অ্যাক্ট কি ?

উত্তর - রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে মাদ্রাস, মুম্বাই ও বাংলা প্রেসিডেন্সি তিনটির স্বতন্ত্র কার্যকলাপের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়। গভর্নর জেনারেল বলে নতুন একটি পথ তৈরি করা হয়। ঠিক করা হয় বাংলার গভর্নরই হবেন গভর্নর জেনারেল। তার অধীনেই মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ঘাঁটিগুলির গভর্নরেরা থাকবেন। গভর্নর জেনারেল পদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। চারজন সদস্য নিয়ে তৈরি হবে একটি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল। এই আইনের ফলে কলকাতা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের রাজধানীতে পরিণত হয়। 




২৫) পিটের ভারত শাসন আইন বলতে কী বোঝো ?

 উত্তর:- ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী নতুন একটি আইন বানান। সেই আইনকে পিঠ প্রণীত বা পিটের ভারত শাসন আইন বলা হয়। ফলে ভারতের ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপের উপর বৃটেনের পার্লামেন্টের নজরদারি নিশ্চিত হয়েছিল। পিঠ প্রণীত আইন মোতাবেক একটি বোর্ড অফ কন্ট্রোল তৈরি করা হয়। সেই বোর্ডকে কোম্পানির সামরিক ও অসামরিক শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই আইনের স্পষ্ট বলা হয়েছিল যে ভারতে কোম্পানির সমস্ত প্রশাসনিক কর্তায় গভর্নর জেনারেলের কর্তৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য।। 




২৭) উড'স ডেসপ্যাচ বলতে কী বোঝো ?

উত্তর - ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উডের নেতৃত্বে শিক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। তাকে উটের প্রতিবেদন বা উড'স ডেসপ্যাচ বলা হয়। সেই ডেসপ্যাচে সরকার কি প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত একটি সুগঠিত শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ও ভারতীয় দুই ধরনের ভাষা চর্চার কথা বলা হয়েছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনটি প্রেসিডেন্সিতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল। উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যাও আগের থেকে বাড়ানো হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়। 




২৮) ইজারদারি ব্যবস্থা বলতে কি বোঝো ?

উত্তর - ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস একটি নতুন ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত চালু করেন। সেই বন্দোবস্ত অনুযায়ী যে ব্যক্তি জমির নিলামে সব থেকে বেশি খাজনা দেওয়ার ডাক দেবে তার সঙ্গে কোম্পানি ওই জমির বন্দোবস্ত করবে। পাঁচ বছরের জন্য ওই জমি ওই ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া বলে ওই বন্দোবস্ত কে ইজারাদারি বন্দোবস্ত বলা হতো।



শেষ কথা ঃ -

এই পোস্টে অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর আলচনা করা হলো। পরবর্তী সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় আসার মতো প্রশ্ন উত্তর আপডেট দেওয়া হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu হোস্টারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url